নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত যৌথ কমিটিকে উচ্চ পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে উন্নীত করা হয়েছে
ভারত ও কাতার সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, সাইবার নিরাপত্তা এবং আন্তঃসীমান্ত হুমকি মোকাবিলায় নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সাম্প্রতিক ভারত সফর এই দুটি দেশের মধ্যে সমসাময়িক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের সুযোগ তৈরি করেছে।

এই সফরের সময় অনুষ্ঠিত আলোচনাগুলো এবং স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা উন্নত করা, সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো শক্তিশালী করা এবং চরমপন্থী মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
এই জোরদার হওয়া সম্পর্কের কেন্দ্রে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার চুক্তি, যা নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগের পাশাপাশি বাণিজ্য, জ্বালানি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বিস্তৃত সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করেছে।

সাইবার যুদ্ধ, সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান জটিলতার কারণে উভয় দেশ গোয়েন্দা সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং নিরাপত্তা কাঠামো আরও উন্নত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

কাতারের আমির ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত যৌথ কমিটির নিয়মিত বৈঠক করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

হুমকি প্রতিরোধে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
দুই নেতা সন্ত্রাসবাদের সব রূপ ও প্রকাশ্যতা, বিশেষত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন এবং এই বিপজ্জনক প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কাঠামোর মাধ্যমে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।

সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে ভারত ও কাতার বাস্তবসম্মত গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও, সীমান্ত নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন মোকাবিলায় উভয় দেশ সহযোগিতা বাড়াবে, বিশেষ করে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অর্থায়নের নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধমূলক আর্থিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে বৈধ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার প্রতিরোধে উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে।

সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল অবকাঠামোর সুরক্ষা
ডিজিটাল হুমকি ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠায় ভারত ও কাতার সাইবার নিরাপত্তাকে একটি অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্রগুলো হলো: সাইবার-নির্ভর আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধ: অর্থ পাচার রোধ ও অবৈধ আর্থিক কার্যক্রম ঠেকানোর জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ; ডিজিটাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: কাতারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ভারতের ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস একীভূতকরণের মাধ্যমে লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সুরক্ষিত রাখা: সরকারি ও বেসরকারি খাতের নেটওয়ার্কগুলোর জন্য সাইবার নিরাপত্তা নীতি জোরদার করা যাতে সাইবার হামলা ও ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকি কমানো যায়।

চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক মোকাবিলা
চরমপন্থা মোকাবিলার জন্য ভারত ও কাতার একটি বিস্তৃত সন্ত্রাসবিরোধী কৌশল গ্রহণ করেছে যা অন্তর্ভুক্ত: সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধ করা: চরমপন্থী কার্যক্রমে অর্থের প্রবাহ ঠেকাতে আর্থিক নজরদারি শক্তিশালী করা; সম্প্রদায়ভিত্তিক সম্পৃক্ততা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি: উগ্রবাদী প্রচারণা প্রতিহত করতে ও নতুন নিয়োগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা; আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি: সন্ত্রাস ও নিরাপত্তা হুমকি চিহ্নিত করতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা।

সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ টাস্ক ফোর্স: একীভূত পদক্ষেপ
নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভারত ও কাতার একটি যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে, যার কাজ হবে: সন্ত্রাসী অর্থায়ন ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ তদন্তে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ; বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটকে দক্ষ করে তোলা; অস্ত্র ও মাদক পাচার প্রতিরোধে সমুদ্র নিরাপত্তা জোরদার করা।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতার একটি মডেল
ভারত ও কাতারের মধ্যে এই শক্তিশালী নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এই অংশীদারিত্বের প্রধান সুফলসমূহ: ব্যবসা ও প্রবাসীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, যা অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে আরও শক্তিশালী করবে; আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, যাতে উদীয়মান নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করা সহজ হয়; একটি বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা কাঠামো তৈরি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে ভারত ও কাতার কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করছে না, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম ও সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে তাদের যৌথ প্রচেষ্টা আধুনিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক