প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১৩ লাখ ভারতীয় সৈন্য ফ্রান্সসহ পূর্ব আফ্রিকা, মেসোপটেমিয়া, মিশর এবং গ্যালিপোলিতে যুদ্ধ করেছিল।
ফ্রান্স সফরে গিয়ে যুদ্ধের স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মার্সিলিতে ‘মাজারগাস ওয়ার সিমেট্রি’ পরিদর্শন করার কথা তাঁর। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে সব ভারতীয় শহিদ হয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতি বহন করছে ওই সমাধিস্থল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন সেখানে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, যেখানে সেই সব ভারতীয় শহিদদের সমাধিস্থল আছে, যাঁদের কথা বছরের পর বছর কেউ মনে করেনি, সেখানে পরিদর্শন করে থাকেন মোদী।

২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ক্যানবেরার ওয়ার মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে শিখ রেজিমেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর হাতে মান সিং ট্রফি তুলে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫-র এপ্রিলে ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মেমোরিয়ালে ও নভেম্বরে সিঙ্গাপুরে আইএনএ মেমোরিয়াল মার্কার পরিদর্শন করেন তিনি। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন ইজরায়েলের হাফিয়ায় ইন্ডিয়ান ওয়ার সিমেট্রিতে।

এছাড়াও বুধবার আইটিইআর সাইট পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টার রিঅ্যাকটর-এর মাধ্যমে পরমাণু শক্তিকে বিশ্বের ভাল কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে। সেটাই পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

এই সফরটি এত গুরুত্বপূর্ণ যেসব কারণে:

১। অনুমান করা হয় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্র শক্তির অংশ হিসেবে প্রায় ১৩ লাখ ভারতীয় সৈন্য জার্মানির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল; যার মধ্যে ৭৪,০০০-এর বেশি সৈন্য নিহত হয়েছিল। ভারতীয় বাহিনী ফ্রান্সসহ পূর্ব আফ্রিকা, মেসোপটেমিয়া, মিশর এবং গ্যালিপোলিতে যুদ্ধ করেছিল।

২। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া ১,০০০-এর বেশি ভারতীয় সৈন্যকে মাজার্গ যুদ্ধ কবরস্থানে দাহ করা হয়েছে। এই কবরস্থানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৮) ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫) মিলিয়ে যথাক্রমে ১,৪৮৭ ও ২৬৭ জন যুদ্ধের হতাহতদের স্মরণ করা হয়েছে।

৩। এর মধ্যে, দাহ করা ২০৫ জন ভারতীয় সৈন্যের স্মরণে কবরস্থানের পেছনে একটি পৃথক স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। মাজার্গ ইন্ডিয়ান মেমোরিয়ালটি ১৯২৫ সালের জুলাই মাসে ফিল্ড মার্শাল স্যার উইলিয়াম বার্ডউড উদ্বোধন করেছিলেন।

৪। কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মাজার্গ যুদ্ধ কবরস্থানটি নিউভ-শ্যাপেল যুদ্ধ স্মৃতিসৌধের পর ফ্রান্সে ভারতীয় সৈন্যদের স্মরণে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থান।

৫। ১৯১৪ সালের ৬ আগস্ট ভারতীয় সেনাবাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে তাদের অভিযান শুরু করে। ওইদিন লন্ডনের যুদ্ধ পরিষদ ভাইসরয়ের সরকারকে মিশরে দুটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন ও একটি ক্যাভালরি ব্রিগেড পাঠানোর অনুরোধ জানায়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই বাহিনীকে ইউরোপে পাঠানো হয়।

৬। কৌশলগত অবস্থানের কারণে মার্সেই ছিল লাখো সৈন্যের আগমন ও প্রস্থানের প্রধান কেন্দ্র। এতে ফরাসি বাহিনীর পাশাপাশি আফ্রিকার দেশগুলোর সৈন্য এবং কমনওয়েলথ বাহিনীর সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার মধ্যে ভারতীয় সৈন্যরাও ছিলেন।

৭। ১৯১৪ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে, দুটি ভারতীয় পদাতিক ডিভিশন - তৃতীয় (লাহোর) ও সপ্তম (মীরাট) - উত্তর-পূর্ব ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের পশ্চিম ফ্রন্টে পৌঁছে ফরাসি ও ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। তারা সম্মিলিতভাবে "ইন্ডিয়ান কর্পস" গঠন করেছিল।

৮। ফ্রান্সে ভারতীয় সৈন্যদের প্রধান ঘাঁটি ছিল মার্সেই। তাদের বেশিরভাগকে ইপ্র সালিয়েন্ট এবং নিকটবর্তী নিউভ-শ্যাপেল অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল, যেখানে জার্মান বাহিনী অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছিল এবং তীব্র যুদ্ধ হয়েছিল।

৯। ১৯১৪ সালের শরতে পশ্চিম ফ্রন্টে পৌঁছানো ভারতীয় সেনা কর্পস জার্মান বাহিনীর অগ্রগতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই অগ্রগতি রোধ করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি সৈন্য, সরঞ্জাম এবং রসদের প্রবাহ নিশ্চিত করত।

১০। ভারতীয় সৈন্যরা বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৯,২০০-এর বেশি পুরস্কার অর্জন করে, যার মধ্যে ১১টি ভিক্টোরিয়া ক্রসও রয়েছে। যুদ্ধ প্রচেষ্টায় ভারতের অসামান্য ভূমিকার ফলে, ১৯১৯ সালে ভার্সাই চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ ছিল ভারত, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক