ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিক উদ্যোগের মাধ্যমে প্রযুক্তি, সরবরাহ শৃঙ্খল ও মহাকাশ গবেষণায় সম্পর্ক জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ অনুসন্ধান এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই লক্ষ্যে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ট্রাস্ট (ট্রান্সফর্মিং দ্য রিলেশনশিপ ইউটিলাইজিং স্ট্র্যাটেজিক টেকনোলজি) নামে একটি নতুন উদ্যোগ চালু করা হয়েছে, যা উদীয়মান প্রযুক্তিতে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি, সরবরাহ শৃঙ্খল শক্তিশালীকরণ এবং সংবেদনশীল প্রযুক্তি সুরক্ষায় গুরুত্ব দেবে।

ট্রাস্ট উদ্যোগের সূচনা

ওয়াশিংটন ডিসিতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আলোচনার পর একটি যৌথ বিবৃতিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ট্রাস্ট উদ্যোগের ঘোষণা দেওয়া হয়। সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের মধ্যে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে এই উদ্যোগ প্রতিরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, জীবপ্রযুক্তি, জ্বালানি ও মহাকাশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে। এ ছাড়া, এটি যাচাইকৃত প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের ব্যবহারে উৎসাহিত করবে এবং সংবেদনশীল প্রযুক্তি সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেবে।

ইন্দাস ইনোভেশন উদ্যোগের সূচনা

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র শিল্প ও একাডেমিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে ইন্দাস ইনোভেশন নামের আরেকটি নতুন উদ্যোগ চালু করা হয়েছে, যা ইন্দাস-এক্স প্ল্যাটফর্মের সফল মডেল অনুসরণ করবে। মহাকাশ, জ্বালানি এবং অন্যান্য উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ উৎসাহিত করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।

প্রতিরক্ষা খাতে ইন্দাস-এক্স উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে দুই নেতা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা পুনর্নিশ্চিত করেছেন। তারা ২০২৫ সালে পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন।

স্থিতিশীল সরবরাহ শৃঙ্খল গঠনের পরিকল্পনা

দুই দেশ সেমিকন্ডাক্টর, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ওষুধ শিল্পের জন্য স্থিতিশীল সরবরাহ শৃঙ্খল গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশেষত, ভারতে ওষুধ উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত তাদের নিজ নিজ দেশীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ঘাটতি মোকাবিলা করতে চায়।

খনিজ অনুসন্ধানে সহযোগিতা

উদীয়মান প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে গবেষণা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে। কৌশলগত খনিজ পুনরুদ্ধার উদ্যোগ নামে একটি নতুন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে, যা লিথিয়াম, কোবাল্ট ও বিরল খনিজ পুনরুদ্ধার ও প্রক্রিয়াজাতকরণকে ত্বরান্বিত করবে। এই উদ্যোগ উন্নত উৎপাদন এবং প্রযুক্তি বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

মহাকাশ গবেষণায় যৌথ প্রচেষ্টা

মহাকাশ গবেষণায় ২০২৫ সালকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র নাসা-ইসরো সহযোগিতা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে অ্যাক্সিয়ম অভিযানের অংশ হিসেবে ভারতীয় মহাকাশচারীকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এ ছাড়া, নিসার মিশনের ত্বরান্বিত সূচনা ঘোষণা করা হয়েছে, যা প্রথমবারের মতো দ্বৈত রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর ভূ-উপরিভাগের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করবে। এই মিশন জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে।

দুই দেশ আরও দীর্ঘমেয়াদি মানব মহাকাশ অভিযানের জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং গ্রহ সংরক্ষণ ও মহাকাশ নিরাপত্তা সংক্রান্ত গবেষণা ও বিনিময় কার্যক্রম জোরদার করবে।

বিজ্ঞান ও গবেষণায় অংশীদারিত্ব

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন ও ভারতের অনুসন্ধান জাতীয় গবেষণা ফাউন্ডেশনের মধ্যে চলমান গবেষণা অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই অংশীদারিত্ব সেমিকন্ডাক্টর, সংযুক্ত যানবাহন, যন্ত্র শেখার কৌশল, পরবর্তী প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ, বুদ্ধিমান পরিবহন ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যৎ বায়োম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মতো ক্ষেত্রগুলোর গবেষণায় গুরুত্ব দেবে।

উন্নত প্রযুক্তিগত সমাধান ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে এই সহযোগিতা বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্বের অবস্থানে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক