নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান ও অজিত ডোভালের মধ্যে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।
সোনোবয় উৎপাদন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয় সোমবার (৬ জানুয়ারি, ২০২৫) নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এবং তার ভারতীয় সমকক্ষ অজিত ডোভালের মধ্যে। এই বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস এটিকে “যৌথ উৎপাদনে প্রথম ধরণের অংশীদারিত্ব” হিসেবে উল্লেখ করে একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করে।
সোনোবয় হলো ছোট আকারের, ব্যয়যোগ্য ডিভাইস যা পানির নিচে সাবমেরিন শনাক্ত করতে এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
বিমান বা জাহাজ থেকে এটি পানিতে ফেলা হলে একটি ফ্লোটিং রেডিও ট্রান্সমিটার এবং একটি হাইড্রোফোন সক্রিয় হয়। হাইড্রোফোনটি পানির নিচের শব্দ সিগন্যাল সংগ্রহ করে এবং তা ভিএইচএফ বা ইউএইচএফ রেডিওর মাধ্যমে রিয়েল-টাইম বিশ্লেষণের জন্য পাঠায়।
যৌথভাবে উৎপাদিত এই সোনোবয় ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর মধ্যে আন্তঃপরিচালনীয় হবে, যা দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্কের গভীরতাকে প্রতিফলিত করে।
ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির প্রেক্ষিতে সোনোবয় নিয়ে এই অংশীদারিত্ব বিশেষ কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। চীনের সাবমেরিন বহর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ, প্রায় ৬৫টি সাবমেরিন রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। চীন পাকিস্তানকে সাবমেরিন প্রযুক্তি সহায়তা দেওয়া এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকে সাবমেরিন উপহার দেওয়ার মাধ্যমে তার প্রভাব বাড়িয়েছে।
বঙ্গোপসাগর এবং মিয়ানমারে চীনের কর্মকাণ্ড ভারতের জন্য শক্তিশালী পানির নিচে শনাক্তকরণ এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। সোনোবয় ভারতকে পানির নিচের হুমকি কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম করবে, যা গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।
সোনোবয় যৌথ উৎপাদন প্রকল্পটি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্রমবর্ধমান গভীরতাকে নির্দেশ করে। এই প্রকল্প ভারতের “মেক ইন ইন্ডিয়া” উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। মার্কিন কোম্পানি আল্ট্রা মেরিটাইম এবং ভারতের রাষ্ট্র-পরিচালিত ভারত ডায়নামিকস লিমিটেড (বিডিএল) প্রকল্পটি পরিচালনা করবে, যা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সক্ষমতাকে উন্নত করবে। ডিভাইসগুলো ২০২৭ সালের মধ্যে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ভারতের নৌবাহিনীর অস্ত্রাগারকে শক্তিশালী করবে।
এই প্রকল্পটি দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতার একটি বিস্তৃত রোডম্যাপের অংশ। এটি চলমান যৌথ উদ্যোগগুলোর পরিপূরক, যেমন জিই এফ৪১৪-আইএনএস৬ ইঞ্জিনের যৌথ উৎপাদন এবং এমকিউ-৯বি সশস্ত্র ড্রোন সংগ্রহ।
এই অংশীদারিত্ব শুধু হার্ডওয়্যার উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং উদ্ভাবনকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। মার্কিন ডিফেন্স ইনোভেশন ইউনিট এবং ভারতের ইনোভেশন ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স সামরিক প্রয়োগের জন্য উন্নত বাণিজ্যিক প্রযুক্তির দ্রুত গ্রহণে কাজ করছে।
গত এক দশকে ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। ২০১৬ সালে ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “মেজর ডিফেন্স পার্টনার” হিসেবে মনোনীত করার পর থেকে উভয় দেশ গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এসব চুক্তি অপারেশনাল সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ভারতের সামরিক সক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি ভারত-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্কও শক্তিশালী হয়েছে। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৭২% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের এই উদ্যোগ “আত্মনির্ভর ভারত” দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উন্নত মার্কিন প্রযুক্তি এবং দেশীয় উৎপাদন সক্ষমতার সমন্বয়ে এই প্রকল্পটি শুধু ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে না বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তায়ও অবদান রাখবে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বলেন, “এই অংশীদারিত্ব আমাদের নৌ সুরক্ষা এবং স্থিতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক নিশ্চিত করার প্রতি উভয় দেশের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।”
২০২৭ সালের মধ্যে সোনোবয় প্রকল্প কার্যকর হওয়ার পর এটি কেবল ভারতের নৌ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে না, বরং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।