ভারত-ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদারিত্ব ২৭ বছর ধরে পরিপক্ক হয়েছে, যেখানে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা মূল প্রাধান্য।
গোয়া ও কোচিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া পরিচালনা করেছে ফরাসি নৌবাহিনীর ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ (সিএসজি), যা পরমাণু শক্তি চালিত এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার চার্লস দে গল দ্বারা পরিচালিত। এই সহযোগিতা ক্লেমেন্সো ২৫ মিশনের অংশ, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নৌবাহিনীর সম্পর্ক শক্তিশালীকরণ ও পারস্পরিক ক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি মুক্ত এবং নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ফরাসি উদ্যোগ।

কৌশলগত অংশীদারিত্ব কার্যকর
যৌথ মহড়াটি ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে বাড়তে থাকা প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বকে নির্দেশ করে, যা ১৯৯৮ সালে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমৃদ্ধ হয়েছে। এ বছরগুলোতে, উভয় দেশ একাধিক দ্বিপাক্ষিক মহড়া পরিচালনা করেছে, যেমন স্থলে শক্তি, আকাশে গরুড়, এবং সমুদ্রে বরুণ।

ফরাসি সিএসজি গত ২৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে ফ্রান্সের টুলন থেকে যাত্রা শুরু করে। এতে তিনটি ফ্রিগেট, একটি সরবরাহ জাহাজ, একটি পরমাণু আক্রমণ সাবমেরিন এবং কয়েকটি বিদেশি এসকর্ট জাহাজ অন্তর্ভুক্ত।

যৌথ অপারেশন ও মহড়া
ভারতীয় ও ফরাসি নৌবাহিনীর মধ্যে যৌথ মহড়াটি পারস্পরিক ক্রিয়াশীলতা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং কার্যকর প্রস্তুতি বাড়ানোর ওপর কেন্দ্রিত ছিল। ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্র এক্স সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, "এই পেশাদারী মিথস্ক্রিয়াগুলি কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতীক এবং উভয় নৌবাহিনীর উচ্চ পেশাদারিত্ব ও পারস্পরিক ক্রিয়াশীলতাকে প্রতিফলিত করে।"

সমুদ্র মহড়া: ফরাসি ডেস্ট্রয়ার এবং ভারতীয় ফ্রিগেট আইএনএস মোরমুগাও কৌশলগত ম্যানুভার পরিচালনা করেছে, যা তাদের সমন্বিত কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।

বিমান কার্যক্রম: ভারতীয় সুখোই ও জাগুয়ার যুদ্ধবিমান ফরাসি নৌবাহিনীর রাফাল মেরিনের সঙ্গে আকাশে মহড়া পরিচালনা করেছে।

ক্রস-ডেক অপারেশন: উভয় নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার ক্রস-ডেক ম্যানুভার পরিচালনা করেছে, যা তাদের কার্যক্রমের সমন্বয় প্রদর্শন করে।

সমুদ্রে পুনঃসরবরাহ: ফরাসি রিফুয়েলিং ট্যাংকার এফএনএস জ্যাক শেভালিয়ের আইএনএস মোরমুগাও-কে জ্বালানি সরবরাহ করেছে।

ক্লেমেন্সো ২৫ মিশন ও আঞ্চলিক গুরুত্ব
ক্লেমেন্সো ২৫ মিশন লোহিত সাগর, ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা একটি মুক্ত ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি ফ্রান্সের অঙ্গীকারকে নির্দেশ করে। ভারতের মহড়া শেষে, ফরাসি সিএসজি ইন্দোনেশিয়ার দিকে যাত্রা করেছে, যেখানে তারা লা পেরোস নামক বহুপাক্ষিক সামুদ্রিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করবে।

ফরাসি নৌবাহিনীর একটি আটলান্টিক ২ সামুদ্রিক টহল বিমান, যা মিশনে ব্যবহৃত হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার আগে ভারতে একটি লজিস্টিক্যাল স্টপওভার করেছে। এই স্টপওভার উভয় দেশের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক এবং পারস্পরিক কার্যক্ষম সহায়তার প্রতীক।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ থিয়েটারে পরিণত হয়েছে। উভয় দেশ এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং নেভিগেশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে।

ফরাসি সিএসজি-এর অ্যাডমিরাল এবং ভারত মহাসাগরে ফরাসি যৌথ বাহিনীর কমান্ডার তাদের ভারতীয় সমকক্ষদের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং যৌথ অপারেশনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ভারত ও ফ্রান্সের কৌশলগত অংশীদারিত্ব ২৭ বছরে পরিপক্ক হয়েছে এবং এতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে।

ভারত ও ফ্রান্সের চলমান যৌথ মহড়া তাদের স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে। পরবর্তী বরুণ মহড়া এই বছর পরে নির্ধারিত হওয়ায়, এই দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও গভীর হবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক