নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠক করলেন শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার দুই দিনের মার্কিন সফর শুরু করেছেন একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে বৈঠক, যেখানে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) এনএসএ ওয়াল্টজের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এআই, সেমিকন্ডাক্টর এবং মহাকাশ খাতে সহযোগিতার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদী লেখেন, “এনএসএ মাইকেল জি. ওয়াল্টজ -এর সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক করেছি। তিনি বরাবরই ভারতের ভালো বন্ধু। ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আমাদের দারুণ আলোচনা হয়েছে। এআই, সেমিকন্ডাক্টর, মহাকাশসহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার শক্তিশালী সম্ভাবনা রয়েছে।”
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী মোদী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছানোর পর মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স) পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড প্রথম উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা হিসেবে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তুলসী গ্যাবার্ডের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক গোয়েন্দা সহযোগিতা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার নিরাপত্তা, উদীয়মান হুমকি এবং কৌশলগত গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে। এছাড়া, তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন নিয়েও মতবিনিময় করেন এবং নিরাপদ, স্থিতিশীল ও নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ)।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বৈঠকের সময় তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে তার আগের সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করেন। উল্লেখ্য, ডিরেক্টর ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মোদীই প্রথম আন্তর্জাতিক নেতা, যার সঙ্গে গ্যাবার্ড সাক্ষাৎ করেছেন।
এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রধানমন্ত্রী মোদী লেখেন, “ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তাকে তার নিয়োগের জন্য অভিনন্দন জানালাম। ভারত-মার্কিন বন্ধুত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করলাম, যা তিনি বরাবরই দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন।”
এটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রথম মার্কিন সফর, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শুরুর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মোদীর এই সফর, যা ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গুরুত্বকে নির্দেশ করে।
নয়াদিল্লিতে ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিসরি বলেন, “এই সফর যুক্তরাষ্ট্রে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের প্রতি দ্বিদলীয় সমর্থনের প্রতিফলন।” তার মতে, এই সফর নতুন প্রশাসনের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করার একটি মূল্যবান সুযোগ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী মোদী দুইবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন—২০১৭ ও ২০১৯ সালে। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের পর মোদী তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে ফোন করে শুভেচ্ছা জানান।
ট্রাম্পের ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ গ্রহণের পর মোদী আবারও ফোন করে তাকে শুভেচ্ছা জানান।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগের মেয়াদেও মোদী ও তার মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক, সৌহার্দ্য এবং দ্বিপাক্ষিক ও কৌশলগত ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় ছিল। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে আয়োজিত ‘হাউডি মোদী’ এবং ২০২০ সালে ভারতের আহমেদাবাদে আয়োজিত ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের দৃঢ়তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। প্রথমবার তারা ২০১৭ সালের জুন মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক