দুই নেতা এমন এক অনন্য কূটনৈতিক ও ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন যা উভয় দেশের জনগণের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে উল্লেখযোগ্য উষ্ণতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও কৌশলগত সহযোগিতার মাধ্যমে গভীর হয়েছিল। বিভিন্ন শীর্ষ সম্মেলন ও জনসভার মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও জনগণের মধ্যে সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান।

২০১৭ সালে ওয়াশিংটনে প্রথম সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে ২০১৯ সালে হিউস্টনের ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠান এবং ২০২০ সালে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক ভারত সফর পর্যন্ত, তারা কূটনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত বন্ধুত্বও তুলে ধরেছিলেন যা দুই দেশের জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

২০২৫ সালের ১২-১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মোদী আবারও যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই সম্পর্ক কীভাবে আরও গভীর হয়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি থাকবে।

গতকালের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকসমূহ

১. ২৬ জুন ২০১৭ – ওয়াশিংটন, ডিসি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

গুরুত্ব: মোদী-ট্রাম্পের প্রথম সাক্ষাৎ; কেন্দ্রবিন্দু: যুক্তরাষ্ট্র-ভারত কৌশলগত বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদার করা;

মূল অর্জন: প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ

২. ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ – হিউস্টন, টেক্সাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (‘হাওডি মোদী’ ইভেন্ট)

গুরুত্ব: এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় প্রবাসীদের অন্যতম বৃহত্তম সমাবেশ; উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত: মোদী ট্রাম্পকে তার ‘বন্ধু’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং প্রকাশ্যে তাকে পুনর্নির্বাচনে সমর্থন জানান; দুই নেতা জনগণের মধ্যে সংযোগ

ও ভারতীয়-আমেরিকানদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।

৩. ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ – আহমেদাবাদ ও নয়াদিল্লি, ভারত (‘নামাস্তে ট্রাম্প’ ইভেন্ট)

গুরুত্ব: এটি ছিল ট্রাম্পের প্রথম ভারত সফর; আহমেদাবাদে বর্ণাঢ্য অভ্যর্থনা: মোদী ও ট্রাম্প একসঙ্গে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। মোতেরায় ১ লাখের বেশি দর্শকের সামনে ট্রাম্প ভারতের বৈশ্বিক উত্থানকে প্রশংসা করেন;

নয়াদিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা: ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হয়;

ভবিষ্যতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও বাণিজ্য নীতি সহজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোদী-ট্রাম্পের ব্যক্তিগত কূটনীতি

দুই নেতা একে অপরের প্রশংসা করেছেন এবং একাধিকবার তাদের শক্তিশালী পারস্পরিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখযোগ্য বক্তব্যসমূহ:

১. ২৪ জুন ২০১৭ – মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে: মোদী: ‘আমি ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে আমাদের অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে আশাবাদী।’

২. ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ – 'হাওডি মোদী' অনুষ্ঠানে: ট্রাম্প: ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের একজন অসাধারণ নেতা’; মোদী: ‘ট্রাম্প আমার বন্ধু। তার নেতৃত্বে আমেরিকা আরও শক্তিশালী হয়েছে।’

৩. ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ – ‘নামাস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে: ট্রাম্প: ‘ভারত মানবতার জন্য আশার আলো এবং মোদী ভারতকে একত্রিত করেছেন’; মোদী: ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’

৪. ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ – ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের পর মোদীর অভিনন্দন বার্তা: মোদী: ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আমাদের পারস্পরিক আস্থার অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করছি।’

৫. ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ – মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে: মোদী: ‘আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করছি। বাণিজ্য, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’

মোদী-ট্রাম্প সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি

১. কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হয়ে ওঠে; ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সিওএমসিএএসএ ও বিইসিএ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা সামরিক সহযোগিতা জোরদারে সহায়তা করে।

২. বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক: শুল্ক নিয়ে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, দুই নেতা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য কাজ করেন; ২০১৯ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়; ভারতের হার্লি-ডেভিডসন মোটরসাইকেলের আমদানি শুল্ক হ্রাস করে ট্রাম্পের দাবির প্রতি সম্মতি জানায়।

৩. জ্বালানি সহযোগিতা: ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপরিশোধিত তেল ও এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি করে; উভয় নেতা পরমাণু শক্তি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন, যাতে ওয়েস্টিংহাউস ভারতের বেসামরিক পরমাণু প্রকল্পে যুক্ত হতে পারে।

৪. ইন্দো-প্যাসিফিক ও সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা: ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতা বাড়ায়; গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা হয়।
৫. জনগণের মধ্যে সংযোগ: ‘হাওডি মোদী’ ও ‘নামাস্তে ট্রাম্প’ ইভেন্টগুলো ভারতীয়-আমেরিকানদের গুরুত্ব তুলে ধরে; ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষ ভারতীয় পেশাদারদের জন্য এইচ-১বি ভিসার নিয়ম সহজ করে।

শেষ কথা

মোদী-ট্রাম্প যুগে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়। তাদের ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব, কৌশলগত বোঝাপড়া ও পারস্পরিক বিশ্বাস প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, জ্বালানি ও ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য বয়ে আনে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই সম্পর্ক কীভাবে এগোবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক