ভারত ও ফ্রান্স যৌথভাবে উন্মুক্ত উৎস সম্পদ তৈরিতে সহায়তা করবে; যা উদ্ভাবক, গবেষক ও জনগণের জন্য উপকারী হবে।
ফ্রান্স সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১০-১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত এই সফরে তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ২০৪৭ হরাইজন রোডম্যাপের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। ২০২৩ সালে গৃহীত এই রোডম্যাপ আগামী ২৫ বছর ধরে ভারত-ফ্রান্স সম্পর্কের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।
সফরের অন্যতম প্রধান অর্জন হলো ভারত-ফ্রান্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ঘোষণা, যা নৈতিক এআই উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বৈশ্বিক কল্যাণ এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) প্রকাশিত এই ঘোষণা আসে একদিন পর, যখন ভারত, ফ্রান্স, চীন এবং আরও ৫৭টি দেশ প্যারিস এআই অ্যাকশন সামিটের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই এআই ঘোষণা স্বাক্ষর করে। এই শীর্ষ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ।
ভারত-ফ্রান্স ঘোষণায় এআই উন্নয়নের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা নিশ্চিত করবে: জনস্বার্থে এআই-এর পরিকল্পনা, নকশা ও উন্নয়ন, যা মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকার, গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের প্রাসঙ্গিক আইন মেনে চলবে।
এআই এবং জেনারেটিভ এআই-এর পরিকল্পনা, নকশা ও উন্নয়ন যাতে বৈষম্য ও অসাম্য সৃষ্টি না করে বা ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার না করে। সব দেশের উদ্ভাবক, গবেষক ও নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত ও মুক্ত উৎস সম্পদ তৈরি করা, যাতে এই প্রযুক্তির কেন্দ্রীকরণ এড়ানো যায় এবং বিকেন্দ্রীকরণকে উৎসাহিত করা যায়।
এই ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্যারিস এআই অ্যাকশন সামিটে উন্মুক্ত উৎস ভিত্তিক এআই ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে। তিনি আরও বলেন, মানসম্পন্ন তথ্য সেট গড়ে তোলা প্রয়োজন যা পক্ষপাতমুক্ত হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব দেন।
শিল্প সহযোগিতা বৃদ্ধি ও গবেষণার প্রসার
ভারত-ফ্রান্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঘোষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে: ভারত ও ফ্রান্স ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট ও কম্পিউটিং সক্ষমতার জন্য শিল্প সহযোগিতা বাড়াবে; ভাষাগত বৈচিত্র্য সমর্থনে প্রশস্ত, উন্মুক্ত ও পুনঃব্যবহারযোগ্য বৃহৎ ভাষা মডেলের উন্নয়নে গবেষণা সহযোগিতা গভীর করবে।
এআই উন্নয়নের সামাজিক প্রভাব নিয়ে একাডেমিক গবেষণাকে সমর্থন করবে, যা সমাজের সব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে; এআই নিয়ে নাগরিক সমাজের উদ্যোগগুলিকে উৎসাহিত করবে, যাতে উদ্যোক্তা, গবেষক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মতবিনিময় বাড়ে।
শিশুদের অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উভয় দেশের বিদ্যমান উদ্যোগগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করবে; এআই-এর জন্য ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে, যা তথ্য সুরক্ষা, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা, উন্মুক্ত উৎস সরঞ্জাম ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে।
হরাইজন ২০৪৭ রোডম্যাপ: দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা
ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে গভীর কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে, যা প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, মহাকাশ, নাগরিক পারমাণবিক সহযোগিতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বহু ক্ষেত্রে বিস্তৃত। ২০২৩ সালে দুই দেশ কৌশলগত অংশীদারিত্বের ২৫ বছর উদযাপন করে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদি ফ্রান্সের জাতীয় দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
২০৪৭ হরাইজন রোডম্যাপের লক্ষ্য আগামী ২৫ বছরে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণ। ২০৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে, এই রোডম্যাপ কৌশলগত খাত, উদ্ভাবন ও জনকল্যাণে গভীর সহযোগিতার পরিকল্পনা করছে।
ভারত-ফ্রান্স মৈত্রীর প্রতীক হিসেবে, প্রধানমন্ত্রী মোদি মার্সেইর মাজারগ যুদ্ধ সমাধিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করা ভারতীয় সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া, উভয় নেতা মার্সেইতে ভারতীয় কনসুলেট জেনারেল-এর উদ্বোধন করেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদি এটিকে ভারত-ফ্রান্স সম্পর্কের নতুন অধ্যায় বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘মার্সেইর সাথে ভারতের সম্পর্ক সুপ্রাচীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি ভারতীয় সেনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল। এই শহরের সাথে বীর সাভারকরেরও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই বিশেষ উদ্বোধনের জন্য আমি ফরাসি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এবং ভারতীয় প্রবাসীদের অভিনন্দন জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী মোদির ফ্রান্স সফর উদ্ভাবন, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও জলবায়ু পরিবর্তনকে ভিত্তি করে ভারত-ফ্রান্স অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক