“প্রবাসী ভারতীয় দিবস একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে, যা ভারত এবং প্রবাসীদের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করে,” বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
রঞ্জিত কুমার: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৯ জানুয়ারি ওডিশার ভুবনেশ্বরে ১৮তম প্রবাসী ভারতীয় দিবসের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। তিনি বিশ্বজুড়ে ভারতীয় প্রবাসীদের গৌরবময় ইতিহাসের উপর আলোকপাত করেন এবং বিভিন্ন দেশে তাদের সাফল্যকে ভারতের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাস্তবে, ২৫ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি বর্তমানে তাদের জন্মস্থান বা পৈতৃক আবাসের বাইরে বসবাস করছেন এবং তারা তাদের ঐতিহ্যের গর্বিত দূত হয়ে উঠেছেন। বহু প্রবাসী ভারতীয় তাদের গৃহীত দেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বৃহৎ বহুজাতিক প্রযুক্তি কর্পোরেশনের সিইওসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন এবং তারা তাদের পৈতৃক আবাসের সাথে সংযোগকে গর্বের সাথে বহন করেন।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে, ভারত সরকার ১০০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণকারীদের এই সমাবেশে স্বাগত জানিয়ে আসছে। এই উদ্যোগটি প্রবাসীদের তাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের নিজ মাতৃভূমির প্রাচীন গৌরব পুনরুজ্জীবিত করতে অবদান রাখার একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।
প্রবাসী এবং ভারতের আকাঙ্ক্ষা
আজ, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা ভারতের প্রতি গভীর আবেগপূর্ণ সংযোগ অনুভব করেন এবং তারা এমনভাবে ভারতের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান যা ভারত সরকারের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাদের অবদান অর্থনৈতিক উদ্যোগ বা কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দৃশ্যমান।
ভারতের নেতৃত্বের উচিত এই ব্যক্তিদের দক্ষতা এবং সক্ষমতাকে কাজে লাগানো। ভারত সরকারের প্রতিনিধিরা প্রবাসীদের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছেন, তাদের ২০৪৭ সালে, ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষে, উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার পথে ভারতের যাত্রায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে।
৮ থেকে ১০ জানুয়ারি ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত ১৮তম প্রবাসী ভারতীয় দিবস ভারতীয় প্রবাসীদের সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং সম্পৃক্ততার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ প্রদান করেছিল। এবারের থিম ছিল “উন্নত ভারতের জন্য প্রবাসীদের অবদান,” যা একটি উন্নত জাতিতে পরিণত হওয়ার ভারতের আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রবাসী একটি সম্পদ
ভারতীয় প্রবাসীরা ক্রমবর্ধমানভাবে ভারত সম্পর্কিত হোস্ট দেশের নীতিগুলিকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠছে। এই ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতীয় প্রবাসীদের পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
যেহেতু প্রবাসীরা তাদের গৃহীত দেশে বিশিষ্ট উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছেন, তারা আর্থিক সম্পদ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা ব্যবহার করে দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য একটি সম্ভাবনাময় পথ উপস্থাপন করছেন।
আজ, ভারতীয় প্রবাসীরা লাতিন আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ, আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে তারা একটি প্রাণবন্ত উপস্থিতি গড়ে তুলেছে, যা ভারতীয় সংস্কৃতির ঐশ্বর্যকে তুলে ধরে।
এই সাংস্কৃতিক প্রভাব স্থানীয় জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরিতে সহায়ক হয়েছে। আরব দেশগুলি, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন অঞ্চলে, ভারতীয় প্রবাসীরা একটি অনন্য স্থান তৈরি করেছে এবং ভারতের সফট পাওয়ার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।
প্রবাসীদের অর্থবহ ভূমিকা
ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের তাদের গৃহীত দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা উল্লেখযোগ্য, কারণ তারা স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার পাশাপাশি আইন প্রণেতাদের কাছে ভারতের স্বার্থ প্রচারের কাজ করে। এর একটি প্রধান উদাহরণ হল ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক চুক্তির পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় প্রবাসীদের সক্রিয় ভূমিকা, যা বিশ্ব মঞ্চে ভারতের মর্যাদা বাড়িয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ক্রমবর্ধমান প্রতিনিধিত্ব তাদের গুরুত্বকে আরও বেশি করে তুলে ধরে। ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষেত্রে, প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেওয়ার ঘটনা এর উদাহরণ।
এছাড়াও, প্রবাসীরা বিদেশি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ভারতের অর্থনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে সমৃদ্ধ করে। তারা ভারতীয় পণ্য রপ্তানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে কাজ করে, যা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় প্রবাসীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রবাসীরা ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে, যা বৈশ্বিক শক্তি গতিবিধিতে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করে।
উপসংহার
ভারত যখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠছে, ভারতীয় প্রবাসীদের মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ভারতীয় ঐতিহ্যের কারণে তারা তাদের গৃহীত দেশে যথেষ্ট সম্মান অর্জন করেছে।
২১তম শতাব্দীতে ভারতের একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভাবের সাথে, প্রবাসীদের ভূমিকা আরও বেশি স্পষ্ট হয়েছে। সরকারের উচিত লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ এবং কর্মসূচি বিকাশ করা, যা প্রবাসীদের বৃহত্তর সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করবে এবং ভারতের ভবিষ্যতের পথ রচনা করতে তাদের আমন্ত্রণ জানাবে।
লেখক একজন সিনিয়র সাংবাদিক এবং কৌশলগত বিষয় বিশ্লেষক; এখানে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক