আরব সাগরে ভারত-ফ্রান্স সামরিক মহড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তায় সহযোগিতার নিদর্শন।
ভারতীয় নৌবাহিনীর দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত স্টেলথ গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার আইএনএস মোরমুগাও এবং ফরাসি নৌবাহিনীর শার্ল দ্য গল ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ এর অংশগ্রহণে এই মহড়াটি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও, ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিভিন্ন উড়োজাহাজ মহড়ায় অংশ নেয়।

মহড়ায় জটিল সামুদ্রিক কার্যক্রম, যৌথ বিমান অভিযান এবং সমন্বিত কৌশলগত কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি ভারত ও ফ্রান্সের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান আন্তঃপরিচালনক্ষমতা এবং পারস্পরিক বিশ্বাসকে চিহ্নিত করে।

১৯৯৮ সাল থেকে ভারত ও ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যেখানে সামরিক সহযোগিতা একটি প্রধান স্তম্ভ। দুই দেশের মধ্যে সামরিক মহড়া যেমন বরুণ (সমুদ্র), শক্তি (স্থল) এবং গরুডা (বিমান) অন্তর্ভুক্ত।

চালনার বিশেষ দিক
সাম্প্রতিক মহড়া তাদের স্থায়ী সামুদ্রিক সহযোগিতার আরেকটি অধ্যায় যোগ করেছে। বর্তমানে ভারত মহাসাগরে অবস্থানরত ফরাসি নৌবাহিনীর শার্ল দ্য গল ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ আঞ্চলিক মিত্রদের সাথে যৌথ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে। এই মহড়ার পর, তারা ইন্দোনেশিয়ায় লা পেরুজ মহড়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরে প্যাসিফিক স্টেলার মহড়ায় অংশগ্রহণ করবে।

মহড়ার কার্যক্রম
এই মহড়ায় উভয় দেশের নৌবাহিনীর প্রস্তুতি ও দক্ষতা প্রদর্শিত হয়। উল্লেখযোগ্য দিকগুলো ছিল:
আইএনএস মোরমুগাও: দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত স্টেলথ গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার।

উন্নত কৌশলগত চালনা: সমুদ্র ও আকাশে সমন্বিত অভিযান।

তথ্য বিনিময়: বাস্তব সময়ে যোগাযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের আদান-প্রদান।

এই মহড়া ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমুদ্রের নীচে, উপরে, এবং আকাশে দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত-ফ্রান্স সামুদ্রিক সংলাপ
এই মহড়ার পর ১৩ জানুয়ারি দিল্লিতে ভারত-ফ্রান্স সামুদ্রিক সহযোগিতা সংলাপ শুরু হবে। এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপে যৌথ টহল, গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারিং এবং ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হবে।

ফ্রান্স, রিইউনিয়ন দ্বীপে তাদের কৌশলগত ঘাঁটির মাধ্যমে, এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংলাপে ভবিষ্যতের মহড়ার সুযোগ এবং ভারত মহাসাগরে ক্রমবর্ধমান চীনা উপস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তায় মনোযোগ
মহড়াটি ভারত মহাসাগরকে একটি কৌশলগত মঞ্চ হিসেবে গুরুত্ব প্রদর্শন করে। চীনের ক্রমবর্ধমান নৌবাহিনী উপস্থিতি এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে তাদের সম্পৃক্ততা ভারত এবং ফ্রান্সকে তাদের সামুদ্রিক সক্ষমতা এবং অংশীদারিত্ব বাড়াতে উৎসাহিত করেছে।

ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে শক্তিশালী গোয়েন্দা বিনিময় চুক্তি রয়েছে, যা তাদের আঞ্চলিক হুমকিগুলোর কার্যকর মোকাবিলায় সক্ষম করে। তাদের সহযোগিতা বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ক্ষেত্রেও বিস্তৃত।

আগামী বরুণ মহড়া এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ উভয় দেশের নৌবাহিনীর অংশীদারিত্ব আরও গভীর করবে।

উপসংহার
ভারত ও ফ্রান্সের সামুদ্রিক অংশীদারিত্ব মহড়া তাদের স্থায়ী কৌশলগত সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় প্রতিশ্রুতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

 উন্নত যৌথ অভিযান পরিচালনা এবং আন্তঃপরিচালনক্ষমতা বৃদ্ধি করে, উভয় দেশ ক্রমবর্ধমান জটিল ভূরাজনৈতিক পরিবেশে কার্যকর প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উদাহরণ স্থাপন করছে।

ভবিষ্যতের মহড়া এবং সংলাপের মাধ্যমে এই অংশীদারিত্ব ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা স্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।