সিঙ্গাপুর ভারতের বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী, আর ভারত সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত ও সিঙ্গাপুর তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর উদযাপন করেছে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি, ২০২৫)। এই উপলক্ষে একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা দুই দেশের মজবুত সম্পর্ক এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্যকে আরও সুদৃঢ় করেছে। নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি থারমান শানমুগারত্নম এক বিশেষ স্মারক লোগো উন্মোচন করেন।
লোগোটি উভয় দেশের জাতীয় পতাকা, ভারতের পদ্ম ও সিঙ্গাপুরের অর্কিডের উপাদান দিয়ে তৈরি, যা দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং দৃঢ় বন্ধুত্বের প্রতীক। এই অনুষ্ঠান টেকসই উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন, প্রতিরক্ষা এবং উন্নত ম্যানুফ্যাকচারিংসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি থারমান, যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে ভারতে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন, রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি মুর্মু এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বিস্তৃত আলোচনা হয় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার জন্য।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি থারমান বলেন, “ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক অংশীদারিত্ব বিদ্যমান, যা পারস্পরিক স্বার্থ এবং অগ্রগতির প্রতি যৌথ প্রতিশ্রুতিতে ভিত্তি করে। গত ৬০ বছরে আমাদের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে, এবং আজ আমরা টেকসই উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং আঞ্চলিক সংযোগে নতুন উদ্যোগ অনুসন্ধান করছি।”
প্রধানমন্ত্রী মোদি সিঙ্গাপুরকে ভারতের পূর্বমুখী নীতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে অভিহিত করেন। দুই নেতার মধ্যে আলোচনায় সেমিকন্ডাক্টর, ডিজিটালাইজেশন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির করিডোর উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লেখেন, “আজ সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি শ্রী থারমান শানমুগারত্নমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। আমরা ভারত-সিঙ্গাপুর কৌশলগত অংশীদারত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। সেমিকন্ডাক্টর, ডিজিটালাইজেশন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং সংযোগের মতো আধুনিক ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়েও কথা হয়েছে।”
দুই দেশের মধ্যে ডিজিটাল এবং টেকসই উদ্যোগের ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে গিফট সিটি ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে একটি তথ্য করিডোর তৈরি করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা নিরাপদ আর্থিক তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করবে।
উভয় পক্ষ সেমিকন্ডাক্টর উন্নয়ন, উন্নত উৎপাদনশীলতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা বাড়াতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। এ ছাড়া, ভারত এবং সিঙ্গাপুর তাদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শংকর রাষ্ট্রপতি থারমানের সঙ্গে বৈঠকে সেমিকন্ডাক্টর, শিল্পপার্ক, দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং বাণিজ্য উন্নয়নের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকের পরে জয়শংকর বলেন, “এই সফর আমাদের সম্পর্কের নতুন গতি আনবে।”
২০২৫ সালের পুরো সময় জুড়ে ভারত-সিঙ্গাপুরের সম্পর্ক উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুর ভারতের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক বিনিয়োগকারী হিসেবে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, সিঙ্গাপুরে ভারতের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব অনেক বেশি।
রাষ্ট্রপতি থারমানের সফরে ওডিশা পরিদর্শনের মাধ্যমে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়নেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ভারত-সিঙ্গাপুর সম্পর্কের এই ৬০ বছর উদযাপন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে এবং আগামী বছরগুলোতে এই সহযোগিতা আরও গভীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক