সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা: ভারতে সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী


|

সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা: ভারতে সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
ফাইল ছবি
২০২৫ সালে ভারত ও সিঙ্গাপুর কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর।
ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে, সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডঃ এনগ ইং হেন ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ পর্যন্ত একটি তিন দিনের সফরে ভারতে এসেছেন। এই সফরের সময় তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সঙ্গে যৌথভাবে ৬ষ্ঠ ভারত-সিঙ্গাপুর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপের সভাপতিত্ব করেন এবং উভয় দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশ নেন।

এই সফরটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ভারত ও সিঙ্গাপুর তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর পূর্তি উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে; ২০২৪ সালটি ভারতের 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি'র ১০ বছর পূর্তি, যা সিঙ্গাপুরকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে।

রাষ্ট্রপতি ভবনে উষ্ণ অভ্যর্থনা মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর, ২০২৪) ডঃ এনগ ইং হেন রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। রাষ্ট্রপতি ভারত ও সিঙ্গাপুরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ওপর জোর দেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সামগ্রিক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার সাম্প্রতিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি সিঙ্গাপুরের সহ-আয়োজনে অনুষ্ঠিত আসিয়ান-ভারত মেরিটাইম অনুশীলনের সফলতার কথা তুলে ধরেন এবং দুই দেশের সামরিক বাহিনীর আসন্ন যৌথ সামরিক মহড়া নিয়ে আশা প্রকাশ করেন।

রাষ্ট্রপতি আরও প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে ভারত ও সিঙ্গাপুরের সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বের ওপর জোর দেন। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সাইবার নিরাপত্তা, অটোমেশন এবং প্রতিরক্ষা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান হওয়ার কারণে এই সহযোগিতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

৬ষ্ঠ ভারত-সিঙ্গাপুর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ এর আগে মঙ্গলবার, ডঃ এনগ ইং হেন এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ৬ষ্ঠ ভারত-সিঙ্গাপুর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপের যৌথ সভাপতিত্ব করেন। উভয় মন্ত্রী দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন, যা আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা বিষয়ে দুই দেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

সংলাপের সময়, দুই মন্ত্রী আগামী পাঁচ বছরের জন্য যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ চুক্তি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই চুক্তিটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং সিঙ্গাপুর প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক প্রশিক্ষণ ও আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করে। এর মাধ্যমে উভয় দেশের বাহিনী ভবিষ্যতের যৌথ মিশন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জের জন্য আরও প্রস্তুত থাকবে।

শিল্প এবং সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে শিল্প সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া। উভয় পক্ষই উদীয়মান প্রযুক্তি, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন এবং সাইবার নিরাপত্তায় সহযোগিতা অন্বেষণে আগ্রহ প্রকাশ করে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সাইবার হুমকির প্রেক্ষাপটে এই আলোচনাগুলি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ভারত ও সিঙ্গাপুর সাইবার নিরাপত্তা উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে, এবং এই ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উভয় মন্ত্রীই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত ও সিঙ্গাপুরের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মিত সংযোগের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। রাজনাথ সিং আসিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক প্লাস এর জন্য সিঙ্গাপুরের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান, যেখানে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুর ভারতকে দেশ সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।

আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা এবং জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং সংলাপের পাশাপাশি, ডঃ এনগ ইং হেন রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা পান, এরপর একটি ত্রি-সেনা গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয়। এটি একটি সামরিক সম্মাননা, যা সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রতি ভারতের সম্মান ও শ্রদ্ধার প্রতীক।

সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দিল্লিতে জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ভারতের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ (জেএমটি) ২০২৪ ডঃ এনগ ইং হেন-এর সফরের সাথে মিল রেখে ১২তম ভারত-সিঙ্গাপুর যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ (জেএমটি) শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কলাইকুন্ডা বিমানঘাঁটিতে। এই বার্ষিক মহড়া ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং সিঙ্গাপুর প্রজাতন্ত্রের বিমান বাহিনী-এর মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে গভীর করে তোলে। জেএমটি -এর মূল লক্ষ্য হলো উভয় বিমান বাহিনীর পরিচালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং এর অংশ হিসেবে উন্নত বায়ু যুদ্ধের অনুশীলন, যৌথ মিশন পরিকল্পনা এবং ডিব্রিফিং সেশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই মহড়াটি উভয় দেশের জন্য তাদের সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার একটি সুযোগ। ২০২৪ সালের জেএমটি-এ সিঙ্গাপুরের বৃহত্তম দল অংশ নিয়েছে, যা তাদের এফ-১৬ এবং এফ-১৫ যোদ্ধা বিমান, জি-৫৫০ বিমান, এবং সি-১৩০ পরিবহন বিমান পরিচালনা করবে। ভারতীয় পক্ষ থেকে, ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স তাদের রাফাল, মিরাজ ২০০০, সু-৩০ এমকেআই, এবং তেজস যোদ্ধা বিমানসহ আরও অনেক কিছু প্রদান করবে।

২০২৫ সালে ভারত ও সিঙ্গাপুর তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছর উদযাপনের প্রস্তুতির সময়, দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার হওয়ার পথে রয়েছে। উভয় দেশই যৌথ সামরিক মহড়া বৃদ্ধি, শিল্প সহযোগিতা বাড়ানো এবং সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই সফর ভারত এবং সিঙ্গাপুরের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক পুনরায় নিশ্চিত করেছে এবং ভবিষ্যতে নতুন সহযোগিতার সুযোগ উন্মোচন করেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক
ভারত-সিঙ্গাপুর: অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অংশীদারিত্ব
ভারত-সিঙ্গাপুর: অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অংশীদারিত্ব
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত ও সিঙ্গাপুরের সম্পর্ক একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়েছে।
|
মোদীসহ সিনিয়র মন্ত্রীদের সাথে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেণ্টের বৈঠক
মোদীসহ সিনিয়র মন্ত্রীদের সাথে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেণ্টের বৈঠক
নীতিন গড়কড়ি ভারতের পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তর এবং শক্তিশালী অবকাঠামো নির্মাণে সাফল্য তুলে ধরেছেন।
|
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছরে ভারত-সিঙ্গাপুর
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০ বছরে ভারত-সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুর ভারতের বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী, আর ভারত সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ।
|
৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট
৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট
২০২৪ সালের অক্টোবরে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হবে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর প্রথম ভারত সফর।
|
ভারত সফরে আসছেন সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি
ভারত সফরে আসছেন সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি
সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বিশ্বব্যাপী ষষ্ঠ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
|