নয়া দিল্লিতে হতে চলেছে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। এক বছর আগে এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছিল ভারত।
৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লিতে হতে চলেছে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। এক বছর আগে এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছিল ভারত। তারপর থেকে গত প্রায় এক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরে এই গোষ্ঠীর বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈছক হয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে জি২০ সভাপতিত্বের সমাপ্তি টানতে চলেছে ভারত। এই মেগা ইভেন্টের ঠিক আগেসংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব এবং বিশ্বে ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে এই সাক্ষাৎকারে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাককী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী:

১ লক্ষেরও বেশি প্রতিনিধি ভারত সফর করবেন। বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে আমাদের জনসংখ্যাগণতন্ত্র এবং বৈচিত্র্যের সাক্ষী হবেন। গত এক দশকেচতুর্থ ডিঅর্থাৎডেভেলপমেন্ট কীভাবে জনগণকে ক্ষমতায়িত করছে তাও দেখবেন তাঁরা। গোটা বিশ্বেই মানব-কেন্দ্রিক উন্নয়ন শুরু হয়েছে। আমরা এই ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছি। ভারতের জি২০ সভাপতিত্বতথাকথিত ‘তৃতীয় বিশ্বের’ দেশগুলিতে আত্মবিশ্বাসের বীজ বপন করেছে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেমন একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা দেখা গিয়েছিলতেমনই কোভিড-এর পরও একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা রূপ নিচ্ছে। প্রভাবশালীদের পরিমিতির পরিবর্তন হচ্ছে। এর স্বীকৃতি প্রয়োজন সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ মডেল ভারতকে উন্নয়নের পথ দেখিয়েছে। সারা বিশ্বের কল্যাণের জন্য এটি একটি নির্দেশক নীতি হতে পারে। জিডিপি পরিমাণ যাই হোক না কেনপ্রত্যেক দেশের কণ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ

অন্য কোনও দেশতাদের জি২০ সভাপতিত্বের সময় কী করবেসেই বিষয়ে কোনও পরামর্শ দেওয়া ঠিক নয়। আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট লুলার ক্ষমতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির উপর আমার আস্থা আছে এবং আমি ব্রাজিলের জনগণের সাফল্য কামনা করি

আমাদের জি২০ সভাপতিত্বের থিম – ‘বসুধৈব কুটুম্বকম – এক পৃথিবীএক পরিবারএক ভবিষ্যত’৷ এটা শুধু স্লোগান নয়আমাদের সাংস্কৃতিক নীতি থেকে উদ্ভূত এক ব্যাপক দর্শন আন্তর্জাতিক স্তরেও আমাদের পথ প্রদর্শক এই নীতি। যাদের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে নাতাদের অন্তর্ভুক্ত করার উচিত বলে আমরা মনে করি প্রতিটি দেশের কণ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ মহাত্মা গান্ধীড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রনেলসন ম্যান্ডেলা এবং কোয়ামে এনক্রুমার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আদর্শ আমাদের অনুপ্রেরণা ভারত ও আফ্রিকার সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে অনেক পদক্ষেপ করা হয়েছে

আকারে ছোট হলেও কিছু দেশ অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন করেছে দুর্ভাগ্যবশতঅতীতে এই ধরনের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানকে দিল্লিবিজ্ঞান ভবন এবং এর আশেপাশেই আবদ্ধ রাখার মনোভাব ছিল দেশের জনগণের ক্ষমতার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস আছে এর আগেও চতুর্থ ব্রিকস সম্মেলন হয়েছে গোয়ায়জয়পুরে হয়েছে দ্বিতীয় এফআইপিআইসি শীর্ষ সম্মেলনহায়দরাবাদে হয়েছে গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ সামিট জি২০ সভাপতিত্বের সময় আমরা ২৮ রাজ্য এবং ৮ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৬০ শহরে ২২০টিরও বেশি বৈঠক করেছি শুধুমাত্র সমস্ত রাজ্যে বৈঠক নাযাতে প্রতিটি রাজ্য তাদের অনন্য সংস্কৃতির ছাপ ফেলতে পারেসেই দিকেও নজর দিয়েছি। এর ফলেগোটা বিশ্ব ভারতের অবিশ্বাস্য বৈচিত্র্যের স্বাদ পেয়েছে

আমরা কাশ্মীর ও অরুণাচলে বৈঠক না করলেএই প্রশ্নের বৈধতা থাকত আমাদের দেশ বিশালসুন্দর এবং বৈচিত্র্যময়। দেশের প্রতিটি জায়গায় জি২০ বৈঠক হবে এটাই স্বাভাবিক জনগণেকর বহুমতের ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হয়েছেযা নীতি নির্ধারণ এবং সামগ্রিক দিকনির্দেশনায় স্পষ্টতা এনেছে এই স্থিতিশীলতার কারণেই গত নয় বছরে বেশ কিছু সংস্কার করা গিয়েছে। ফলে বৃদ্ধি স্বাভাবিক ছিল

দীর্ঘদিন ধরে গোটা বিশ্ব মনে করতভারত হল ১০০ কোটির বেশি ক্ষুধার্ত পেটের দেশ। এখনভারতকে ১০০ কোটির বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী মন২০০ কোটির বেশি দক্ষ হাত এবং কয়েক কোটি তরুণের দেশ হিসাবে দেখা হচ্ছে যেসব দেশ ঋণ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বা এর মধ্য দিয়ে গিয়েছেতারা আর্থিক শৃঙ্খলাকে আগের থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে অন্যান্য যারা বেশ কিছু দেশকে ঋণ সংকটের কারণে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছেতারা একই ভুল করা এড়াতে সচেতন

আমাদের রাজ্য সরকারগুলিকে আমি আর্থিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। অর্থনৈতিক দিক থেকে দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতি স্বল্পমেয়াদে রাজনৈতিক লাভ দিতে পারে। কিন্তুদীর্ঘমেয়াদে এর বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্য চোকাতে হতে পারে এই আর্থিক দায়িত্বহীনতার ফল সবথেকে বেশি ভুগতে হয় সমাজের সবথেকে দরিদ্র এবং দুর্বল অংশকে প্রযুক্তির গণতন্ত্রীকরণের ক্ষেত্রেবিশ্বব্যাপী ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন অভিযানও ছিল সবথেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক। আমরা বিনামূল্যে ২০০ কোটি ডোজ দিয়েছি। এই অভিযান ছিল কোউইন প্ল্যাটফর্ম নির্ভর। এই প্ল্যাটফর্মটি ওপেন সোর্স হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল

আমাদের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচারবিশেষ করে মহামারির সময়ে যেভাবে তা ব্যবহার করা হয়েছেগোটা বিশ্ব তাতে বিস্মিত প্রযুক্তির সুবিধা যাতে সকলে পায়আমরা সেই দিকে নজর রেখেছি আগে মনে করা হতপ্রযুক্তি সমাজে অসাম্য সৃষ্টি করছে। আমরা একে সাম্যের কাজে ব্যবহার করছি জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আমরা ব্যাপকভাবে এগিয়েছি। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের সৌর শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে জি২০ দেশগুলির মধ্যে সম্ভবত আমরা প্রথমযারা জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত তারিখের ৯ বছর আগে অর্জন করতে পেরেছি

জৈব জ্বালানী জোটও জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আরেকটি পদক্ষেপ। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জৈব জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের বিকল্প শক্তিএকদিকে শক্তি নিরাপত্তা বাড়াবেদেশীয় শিল্পের জন্য সুযোগ তৈরি করবে এবং সবুজ কর্মসংস্থান তৈরি করবে অনেক ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা কাম্য। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অনিবার্য বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান এবং ভারতের ভূমিকা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হলে তবেই প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে পারে। বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের পদ্ধতি একুশ শতকে কার্যকর হতে পারে না

বর্তমানে ভারতীয়দের সামনে বৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপনের এক দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে। পরবর্তী ১০০০ বছর ধরে এই সময়ের কথা বলবে মানুষ আমি নিশ্চিত ২০৪৭ সালের মধ্যে আমাদের দেশ উন্নত দেশগুলির তালিকায় উঠে আসবে। আমাদের অর্থনীতি আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উদ্ভাবনী হবে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের দরিদ্র জনগণ জয়ী হবে। আমাদের জাতীয় জীবনে দুর্নীতিজাতপাত ও সাম্প্রদায়িকতার কোনও স্থান থাকবে না খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক