আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাস নাগাদ আবুধাবিতে ভারতের প্রকৌশল জগতের গর্ব আইআইটির ক্যাম্পাস চালু করা হবে।
শেষ হল অপেক্ষার প্রহর। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফ্রান্স থেকে আমিরশাহিতে পৌঁছে এক বিবৃতিতে মোদী বলেন, “আমি আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য অপেক্ষা করছি।”

বৈঠকের সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “আমরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করব।” এদিন বৈঠক হয় প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদ কাসার আল ওয়াতনে। সেখানে তাঁকে আলিঙ্গন করেন প্রেসিডেন্ট স্বয়ং। গত বছর ওই বিষয়গুলি নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে। সেগুলিরই অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।

প্রধানমন্ত্রীকে যখন গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়, তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের তিরঙ্গা পতাকা নাড়াতে দেখা যায়। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, ফিনটেক, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং রোবাস্ট পিপল টু পিপল টাইজ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমিরশাহিকে কপ-২৮ প্রেসিডেন্সির জন্য পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছিলেন।

ফ্রান্স সফর শেষ করে মধ্য প্রাচ্যে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার সকালেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সে দেশের রাজধানী আবুধাবিতে পৌঁছনোর পর তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ আর নাহয়ান। দু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্য বিশেষ ভোজের আয়োজন করেছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর প্রেসিডেন্ট। সেই ভোজের মেনু তালিকা সামনে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মোদীর জন্য সম্পূর্ণ নিরামিষ পদের আয়োজন করেছিলেন মহম্মদ বিন জায়েদ।

নরেন্দ্র মোদীর জন্য সম্পূর্ণ নিরামিষ পদের আয়োজন হয়েছিল আবুধাবিতে। মেনুর শুরুতেই ছিল স্যালাড। স্থানীয় বিভিন্ন সব্জি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল সেই স্যালাড। সেই স্যালাডে ছিল বিভিন্ন রকমের খেজুরও। মোদীর জন্য স্টার্টারে ছিল মশলা সস দিয়ে তৈরি গ্রিলড ভেজিটেবলস। মেন কোর্সেও হরেক রকম পদ ছিল মোদীর জন্য। ডাল, রুটি, ডাল। ফুলকপি ও গাজর দিয়ে বিশেষ ধরনের সব্জিও বানানো হয়েছিল মোদীর জন্য। শেষ পাতে ছিল মরসুমি ফল। মোদীর জন্য তৈরি সমস্ত পদ ছিল নিরামিষ। ভেজিটেবল ওয়েল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সব পদ। কোনও ধরনের দুগ্ধজাত দ্রব্য বা ডিম ব্যবহার করা হয়নি এই সব খাবারে।

দু দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে মজবুত করতে আলোচনা হয়েছে মোদী ও বিন জায়েদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে। আবুধাবিতে দিল্লি আইআইটি-র ক্যাম্পাস তৈরির জন্যও মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য হবে নিজেদের মুদ্রায়। ডলার থাকবে না মাঝখানে। আমিরশাহী সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এই মর্মে চুক্তি করেছেন সে দেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ।

উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশই ডলারকে মাঝে না রেখে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করছে বিশ্বে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে ডলারের দাম ওঠানামা করে। বিশেষ করে জ্বালানি লেনদেনে অন্য দু’টি দেশের বাণিজ্যে তার প্রভাবও পড়ে। এক্ষেত্রে যদিও পারস্পরিক মুদ্রার মূল্যমান স্থির করার প্রক্রিয়া তৈরি করতে হয়।

দু’দিনের ফ্রান্স সফর সেরে শনিবার মোদী পৌঁছেছেন আবুধাবিতে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে জ্বালানির পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার সমঝোতা হয়েছে। দিল্লি আইআইটি ক্যাম্পাস খুলবে আবুধাবিতে।

সমঝোতা হয়েছে খাদ্য সুরক্ষা, অনলাইনে আর্থিক লেনদেন প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষার মতো বিষয়ে। দু’পক্ষে এদিন সমঝোতা সই হওয়ার পর মোদী বলেছেন, ‘‘দু’দেশের বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে দ্রুত। এখন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আয়তন ৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।’’

ভারতের বহু নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে বিভিন্ন কাজে যান। তাঁদের পাঠানো অর্থ দেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারকে ফুলিয়ে তোলে। কিন্তু নানা কারণে নিপীড়িত হওয়ার অভিযোগে পরিযায়ী শ্রমিকরা সরব হয়েছেন বারবার। এই প্রশ্নে সমঝোতা হয়েছে কিনা স্পষ্ট নয়।

মোদী বলেছেন, ‘‘গত বছর দু’দেশের সুসংহত অর্থনৈতিক সমঝোতা সই হয়েছে। তার পর এক বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০ শতাংশ বেড়েছে।’’

সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ’র সামনের অধিবেশন হবে আমিরশাহীতে। ভারত চলতি বছরে জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব করছে। এই গোষ্ঠীতে আমিরশাহী আমন্ত্রিত সদস্য। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক