বিশ্বশান্তির বার্তা দিয়ে জাপানের ঐতিহাসিক হিরোশিমায় মহাত্মা গান্ধীর আবক্ষমূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
জাপানের হিরোশিমায় দেশটির প্রখ্যাত লেখক, হিন্দি ও পঞ্জাবি ভাষাবিদ, পদ্মশ্রী ড. টমিও মিজোকামির সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার, ড. টমিও মিজোকামির সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রী টুইট করে জানিয়েছেন, “হিরোশিমাতে অধ্যাপক টমিও মিজোকামির সঙ্গে আলাপচারিতা করতে পেরে আমি আনন্দিত। তিনি একাধারে একজন পদ্ম পুরস্কারপ্রাপ্ত, একজন বিশিষ্ট হিন্দি এবং পঞ্জাবি ভাষাবিদ। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে জাপানের জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করছেন।”

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর খুশি ব্যক্ত করেছেন টমিও মিজোকামি নিজেও। তাছাড়া, কেন তিনি হিন্দি শিখেছেন, তাও প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন বলে জানা গিয়েছে।

এছাড়াও বিশিষ্ট জাপানি চিত্রশিল্পী হিরোকো তাকায়ামার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, জাপানি চিত্রশিল্পী হিরোকো তাকায়ামার সঙ্গে উষ্ণ কথোপকথন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তাকায়ামাকে তাঁর চিত্রকর্মে ভারতের চেতনা আত্মস্থ করার জন্য এবং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতার প্রচারে অবদান রাখার জন্য প্রশংসা করেছেন। এসময়, প্রধানমন্ত্রীকে বুদ্ধের একটি চিত্রকর্ম উপহার হিসেবে দেন জাপানি শিল্পী।

হিরোকো তাকায়ামা বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী আমাকে বলেছেন, চিত্রটি খুব সুন্দর এবং তিনি এটি গ্রহণ করতে পেরে খুবই খুশি। ৪২ বছর আগে আমি প্রথম ভারতে গিয়েছিলাম। আমি ভারতের মাটিতে বসবাসকারী মানুষজনের চেতনা দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছি। তারপর থেকে আমি ভারতীয় জনগণ এবং সংস্কৃতির শক্তির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়েছে, যা আমি তাঁদের কাছ থেকে পেয়েছি।”

এদিকে, বিশ্বশান্তির বার্তা দিয়ে হিরোশিমায় মহাত্মা গান্ধীর আবক্ষমূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার জাপান পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ শনিবার হিরোশিমায় মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি উন্মোচন করে মাল্যদান করেন তিনি।

আণবিক অভিশাপগ্রস্ত ওই শহর থেকে বর্তমান যুগে মহাত্মার বাণীর প্রাসঙ্গিকতা যে কতটা তা স্পষ্ট করেন নমো। এদিন তিনি বলেন, “হিরোশিমার নাম শুনলে আজও পৃথিবী যেন আতঙ্কিত হয়ে উঠে। এই শহরে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি উন্মোচন বিশেষ বার্তাবহ। আজ বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে শক্তি জোগাচ্ছে মহাত্মার শান্তি, অহিংসা ও ভ্রাতৃত্বের বাণী।”

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিশাপ আজও বহন করে চলেছে হিরোশিমা। ৮ আগস্ট, ১৯৪৫ ওই শহরে বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা ফেলে আমেরিকা। ইন্দ্রের বজ্রের সমতুল্য ওই অস্ত্রের প্রহারে মুহূর্তে প্রায় শ্মশানে পরিণত হয় হিরোশিমা। মৃত্যু হয় প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের। তবে এখানেই শেষ নয়, কয়েক দশক পরেও তেজস্ক্রিয়তার ছাপ রয়ে গিয়েছে সেখানে।

এসবের পাশাপাশি, আজ জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মোদি। নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, “আজ সকানে প্রধানমন্ত্রী কিশিদার সঙ্গে খুবই সদর্থক বৈঠক হয়েছে। ভারত ও জাপানের দ্বীপাক্ষিক সম্পর্ক খতিয়ে দেখেছি আমরা। একই সঙ্গে, ভারতের জি-২০ সভাপতিত্ব ও জাপানের জি-৭ প্রেসিডেন্সি নিয়ে আলোচনা হয়।”

প্রসঙ্গত, জি-৭ সম্মেলনে এটাই মোদির চতুর্থবার যোগদান। গত বছর জার্মানির বাভারিয়ায় তিনি গিয়েছিলেন। এর আগে ২০২১ সালে ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। তবে সেবারের সম্মেলন ছিল ভারচুয়ালি। তারও আগে ২০১৯ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে প্রথমবার তিনি যোগদান করেছিলেন। ২০২০ সালের সম্মেলনটি বাতিল হয়েছিল করোনা আবহে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক