ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোহেনের এই সফরের মধ্য দিয়ে চলতি বছরে তৃতীয়বারের মতো ইহুদি রাষ্ট্রটির শীর্ষ কোনো নেতা ভারতে এলেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাত করেছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন। মঙ্গলবার (৯ মে, ২০২৩) কৃষি, জল এবং উদ্ভাবনের মতো অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করার উপায় নিয়ে মতবিনিময় করেন উভয় নেতা।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজ টুইটার হ্যান্ডলে লিখেন, “ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী @এলি কোহেন এর সাথে দেখা করে আনন্দিত। আমরা কৃষি, জল, উদ্ভাবন এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্কের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলিতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।”

এছাড়া, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোহেনের সাথে বৈঠকে ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে গভীরতর উদ্ভাবন এবং জ্ঞান অংশীদারিত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন এবং দুটি অর্থনীতির বিস্তৃত পরিপূরক হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।

এর আগে তিনদিনের সফরে ভারতে পৌঁছেছেন ইজরায়েল বিদেশমন্ত্রী ইলাই কোহেন। সোমবার নয়াদিল্লিতে অবতরণ করে তাঁর বিশেষ বিমান। সফরের প্রথম দিন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গত শনিবার ইসলামাবাদে ছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাং। উপস্থিত ছিলেন পাক বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। হাজির ছিল আফগান তালিবানের প্রতিনিধি মৌলবী আমির খান মুত্তাকি। সেখানেই আফগানিস্তানকে সাহায্য করার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে পাকিস্তান ও চিন। পাকিস্তানের পর এবার আফগানিস্তানও অংশ হতে চলেছে বেজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের। সবমিলিয়ে, এবার আফগানিস্তানে প্রভাব বৃদ্ধি করছে চিন। আর এই কাজে পাকিস্তানকে ঘুঁটি করছে কমিউনিস্ট দেশটি।

এহেন পরিস্থিতিতে ভারতে ইজরায়েলি বিদেশমন্ত্রীর সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। চিন ও পাকিস্তানের অভিসন্ধি নিয়ে দুই দেশই বরাবর সন্দিহান। সফরের প্রথম দিন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ইলাই কোহেন বলে খবর। তারপর নয়াদিল্লিতে ইজরায়েল-ভারত বাণিজ্যিক সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। বলে রাখা ভাল, গত এপ্রিল মাসে ভারতে এসেছিলেন ইজরায়েলের অর্থমন্ত্রী নির বরকাত। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত করাই ছিল তাঁর সফরের উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য, ভারতের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বরাবরই সাহায্য করেছে ইজরায়েল। পাকিস্তানে সার্জিকাল স্ট্রাইকের সময়ও ইজরায়েলি বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল। বিশেষ করে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর ভারতের পাশে দাঁড়ায় তেল আভিভ। সন্ত্রাসদমনে একযোগে লড়াইয়ের আশ্বাস দেয়ে বন্ধু দেশটি। একেবারে নিঃশর্তে ভারতকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিল অন্যতম শক্তিধর দেশ ইজরায়েল। সূত্রের খবর, জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিজেদের পরামর্শ এবং প্রযুক্তি দিয়ে শর্তহীনভাবে ভারতকে সাহায্য করতে প্রস্তুত হয়েছিল তৎকালীন নেতানিয়াহু প্রশাসন।

বলে রাখা ভাল, ইজরায়েল জন্মলগ্ন থেকেই নিজের প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্রের নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে নিজের আয়ত্ত্বে রেখেছে। আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ব্যবহার করেছে। দেশটির অস্ত্রভাণ্ডার অনেককেই হার মানাবে। এমনকী, চিন, রাশিয়া, আমেরিকার মতো দেশগুলিও ইজরায়েলকে রীতিমতো সমঝে চলে। আসলে, ইজরায়েল নিজেও এক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। জন্ম থেকেই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে। এদেশের সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি। নিজেদের ভূখণ্ডে কোনওরকম জঙ্গিমূলক কার্যকলাপ নিমেষে রুখে দেয় ইজরায়েলি সেনা। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক