জুলাই মাসেই ফ্রান্স সফরে যাবেন মোদী। চলতি বছরে ভারত ও ফ্রান্স, দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্কের ২৫ বছর উদযাপন করছে।
জুলাই মাসেই ফ্রান্স সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চলতি বছরে ভারত ও ফ্রান্স, দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্কের ২৫ বছর উদযাপন করছে। সেই উপলক্ষে এই বছরের বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ। শুক্রবার (৫ মে), বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফরাসী প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ১৪ জুলাই প্যারিসে আয়োজিত বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন তিনি।

শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, ভরত-ফ্রান্সের সম্পর্কের এই গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলককে স্মরণীয় করে রাখতে, ফরাসী বাহিনীর সঙ্গে কুচকাওয়াজে অংশ নেবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ভারত-ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদারিত্বের পরবর্তী পর্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিল্পের বিস্তৃত ক্ষেত্র-সহ কৌশলগত, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নতুন উচ্চাকাঙ্খী লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।”

বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ইউরোপ এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় শান্তি ও সুরক্ষা বজায় রাখার ক্ষেত্রে, ভারত এবং ফ্রান্স একই দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে। পাশাপাশি, দুই দেশ রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের নীতি মানার ক্ষেত্রে এবং লক্ষ্যগুলি অর্জন করার ক্ষেত্রেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ভারত ও ফ্রান্সের সহযোগিতার মূল ভিত্তিই রাষ্ট্রপুঞ্জের এই সনদ।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এই সফরে জলবায়ু পরিবর্তন, জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন-সহ বর্তমানে সময়ের মূল চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে যৌথ উদ্যোগের কথা ঘোষণা করা হবে। সেই সঙ্গে ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর বহুপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে ভারত ও ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি ফের একবার ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ বলেও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।

বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রীকে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ফরাসি এবং হিন্দি ভাষায় টুইট করে জানান, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ। টুইটে তনি লেখেন, “প্রিয় নরেন্দ্র, ১৪ জুলাইয়ের কুচকাওয়াজে সম্মানিত অতিথি হিসেবে তোমাকে প্যারিস স্বাগত জানাতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছি।”

কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে বিশ্বে ভারতের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, ফরাসী প্রেসিডেন্টের এই আমন্ত্রণই তা বলে দিচ্ছে। ভারত বর্তমানে সবথেকে বেশি জনসংখ্যার দেশই শুধু নয়, জি২০ গোষ্ঠীর সভাপতিও বটে। পাশাপাশি গত কয়েক বছরে ফ্রান্সের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক এবং সামরিক বন্ধন কতটা মজবুত হয়েছে, সেটাও এই আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই পতন ঘটেছিল বাস্তিল দুর্গের। ফ্রান্সের ইতিহাসে তথা গোটা বিশ্বের ইতিহাসেই এই ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাস্তিলের পতনকেই বলা যেতে পারে ফরাসী বিপ্লবের মূর্ত প্রতীক। এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করতেই বাস্তিল দিবস পালন করা হয়ে। সাধারণত যেই সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় ফ্রান্স, সেই সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরই বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানায় ফরাসী সরকার। সাম্প্রতিক অতীতে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রাক্তন জার্মান চ্য়ান্সেলার অ্যাঞ্জেলা মর্কেলের মতো রাষ্ট্রপ্রধানদের বাস্তিল দিবসের কুচকাওয়াজে সম্মানিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক