রোববার দিল্লিতে অবস্থিত কানাডার হাই কমিশনারকে খালিস্তান সমর্থকদের বিক্ষোভ নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানায় ভারত।
খালিস্তানপন্থি নেতা অমৃতপাল সিং এর সমর্থনে গত কয়েকদিনে কানাডার ভারতীয় দূতাবাস এবং কনস্যুলেটগুলোতে পুলিশের উপস্থিতির মধ্যেও বিক্ষোভের জেরে ভারত কানাডার হাই কমিশনারকে তলব করে কড়া বার্তা দিয়েছে। রোববার দিল্লিতে অবস্থিত কানাডার হাই কমিশনারকে খালিস্তান সমর্থকদের বিক্ষোভ নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানায় ভারত।

পুলিশের উপস্থিতিতে কী করে খালিস্তানপন্থিরা নিরাপত্তা ভেদ করে ভারতের কূটনৈতিক মিশন এবং কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে পারল? তবে কী সুরক্ষায় ফাঁক ছিল? নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট কঠোর ছিল না?-কানাডা সরকারের কাছে এর জবাব চেয়েছে ভারত সরকার। বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য কীভাবে কানাডা সরকার অনুমতি দিল জানতে চাওয়া হয়েছে সে ব্যাখ্যাও।

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রোববার বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট প্রতিবাদ জানিয়েছে দিল্লি। কানাডার হাই কমিশনারকে ভিয়েনা কনভেনশন মোতাবেক নিজেদের কী কী দায়িত্ব পালন করার কথা, তাও মনে করিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার।

অভিযুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সমর্থকদের বিরুদ্ধে কানাডার আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানোর পাশাপাশি কানাডার ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত কর্মীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার দেখভালের দায়িত্ব যে সে দেশের প্রশাসনের উপরই বর্তায়, সেকথা মনে করিয়ে দিয়েছে ভারত।

পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, আমাদের দূতাবাস এবং এর কর্মীদের নিরাপত্তা রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে কানাডা সরকার।’’

কানাডার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শনিবার ভারতীয় কনস্যুলেটের সামনে শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে স্বাধীন শিখ রাজ্যের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের বাইরে কানাডাতেই শিখ জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত রোববারও কানাডায় খলিস্তানপন্থিদের বিক্ষোভের আশঙ্কায় একটি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।

বিক্ষোভকারী এই খলিস্তানপন্থিরা পলাতক অমৃতপালের সমর্থক। অমৃতপালকে খুঁজছে ভারতের পুলিশ। এক সপ্তাহ আগে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধরের কাছের ডেরা থেকে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যান এই শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা।

অমৃতপাল সিং ও তার এক সহযোগীকে ধরতে ভারত জুড়ে চিরুনি ‍অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তিনি উত্তরাখণ্ডে প্রবেশ করেছেন এমন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর রাজ্যজুড়ে সতর্কাবস্থা জারি করা হয়।

অমৃতপাল খালিস্তান বা শিখদের জন্য একটি আলাদা মাতৃভূমিকে সমর্থন করেন। পাঞ্জাবে তার দ্রুত উত্থান ১৯৮০’র দশকে খালিস্তান বিদ্রোহের স্মৃতিই পুনরুজ্জীবিত করেছে। যে বিদ্রোহ কেড়ে নিয়েছিল হাজারো মানুষের প্রাণ।

অমৃতপাল ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, আইনপ্রয়োগে বাধাদান এবং অস্থিরতা তৈরির অভিযোগ করেছে পুলিশ।

পুলিশ আমৃতপালকে ধরার অভিযানে নেমে ধরপাকড় শুরু করার পর এর প্রতিবাদে বিদেশের ভারতীয় দূতাবাসগুলোতে বিক্ষোভ-হামলা হয়। প্রতিবাদে সরব হয় বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভুত শিখরা।

কানাডার আগে লন্ডনেও ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে খালিস্তানপন্থি সংগঠনগুলো বিক্ষোভ করেছিল। বিক্ষোভের সময় হাই কমিশন ভবনের বারান্দ থেকে ভারতের পতাকা নামিয়ে খালিস্তান লেখা ব্যানার উড়িয়েছিল বিক্ষোভকারীরা।

ভারতের পুলিশ সেই ঘটনার তদন্ত গত সপ্তাহে শুরু করেছে। লন্ডনে ওই বিক্ষোভের ঘটনার জেরে গত রোববার ভারত নয়াদিল্লিতে অবস্থিত শীর্ষ ব্রিটিশ ‍কূটনীতিককে তলব করে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক