ঐতিহাসিকভাবেই ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক যোগাযোগ ও দৃঢ় সামাজিক বন্ধন রয়েছে সাবেক হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল এবং ভারতের মধ্যে।
নেপালের নতুন রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পাউডেলের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। শুক্রবার, দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার অভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন উভয় রাষ্ট্রপতি। এসময়, পাউডেলকে অভিনন্দনও জ্ঞাপন করেন ভারতীয় রাষ্ট্রপ্রধান।

পরবর্তীতে তথ্যটি নিশ্চিত করে এক বিবৃতি প্রদান করে ভারতের রাষ্ট্রপতির সচিবালয়। জানা যায়, চলমান কেরালা সফরের মাঝেই নেপালের রাষ্ট্রপতিকে ফোন করেছেন মুর্মূ। উল্লেখ্য, ঐতিহাসিকভাবেই ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক যোগাযোগ ও দৃঢ় সামাজিক বন্ধন রয়েছে সাবেক হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল এবং ভারতের মধ্যে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকাল ১০টায় নেপালের পার্লামেন্ট ভবনে শুরু হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ, চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। তারপর ভোট গণনা শেষে রামচন্দ্র পাওদেলকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। তিনি দেশটির তৃতীয় নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং নেপালের পার্লামেন্টের বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-ইউনিফায়েড মার্কসিস্ট-লেনিনিস্টের (সিপিএন-ইউএমএল) ভাইস চেয়ারম্যান সুভাষচন্দ্র নেমবাংকে ১৮ হাজার ২৮৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন তিনি।

নেপালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন কেবল দেশটির কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যরা। দেশটির কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের সদস্য সংখ্যা ৩১৩ এবং সাতটি প্রদেশের আইনসভাগুলোর সম্মিলিত সদস্যসংখ্যা ৫১৮ জন।

নেপালের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ৫২ হাজার ৭৮৬ ভোট বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের একটি ভোটকে ধরা হয় ৭৯টি ভোট এবং প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যদের একেকটি ভোটের মান ৪৮টি ভোটের সমান।

এর আগে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধীদল থেকে একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার পরিকল্পনা করায় দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রীসহ চার মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এতে করে বিপাকে পড়ে ক্ষমতাসীন জোট।

জোট সরকারের শরিক দল ‘দ্য কমিউনিস্ট ইউনিফাইড মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট’ (ইউএমএল)-এর প্রার্থীর পরিবর্তে রাম চন্দ্রকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান প্রচণ্ড। এর প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন উপ-প্রধানমন্ত্রী রাজেন্দ্র। তার সঙ্গে পদত্যাগ করেন নগর উন্নয়ন মন্ত্রী, আইন বিষয়ক মন্ত্রী এবং একজন জুনিয়র মন্ত্রীও।

এরপর ভাঙন দেখা দেয় নেপালের জোট সরকারে। চার মন্ত্রীর পদত্যাগের পর সরকার থেকে সরে দাঁড়ায় অন্যতম শরিক দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন সিপিএন-ইউএমএল পার্টি।

এক মাস ধরেই দেশটির রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা চলছে। সব শেষ ওলির এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ডের নেতৃত্বাধীন সরকার আরও চাপে পড়ে।

সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের আগে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির (ইউনিফাইড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী, সিপিএন-ইউএমএল) শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। এরপরই রাজনৈতিক সমীকরণের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে সরকারের ওপর সমর্থন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

ইউএমএলের ভাইস চেয়ারম্যান বিষ্ণু পাওদেল জানান, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর ভিন্ন ধারায় কাজ শুরু এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে পরিবর্তিত রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে সরকার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেসের শীর্ষ মাওবাদী নেতা রাম চন্দ্র পাওদেলকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সম্প্রতি সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড। এটি জানানোর পরই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। এর জেরেই সরকার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলির নেতৃত্বাধীন জোট। এরপর ৯ মার্চ দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক