২০২১ সালে ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল মার্কিন প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবসায়িক ভিসা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আমেরিকা যেতে চান, এমন মানুষজন এর ফলে উপকৃত হবেন। ওয়াশিংটনে ত্রয়োদশ ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নীতি সংক্রান্ত মঞ্চের বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, ব্যবসায়িক ভিসা জারির বিষয়টি বর্তমানে অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী। এতে সময় কম লাগলে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হবে।

ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ভোরে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, “ব্যবসায়িক ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে গতি বাড়ানোর জন্য আমরা আমেরিকার কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, ব্যবসা ও বাণিজ্যের স্বার্থে আসা মানুষজনের তাতে উপকার হবে।”

পীযূষ গোয়েল আরও বলেছেন, পেশাদার এবং দক্ষ শ্রমিক, পড়ুয়া, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের চলাচল দুই দেশের মধ্যে প্রসারিত হচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে।

এছাড়াও, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে 'মিনি' বাণিজ্য চুক্তি এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে ভারত আর আগ্রহী নয়। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি বাজার সুবিধা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সহজীকরণের ওপর জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বুধবার জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

এই উন্নত যোগাযোগের জন্য দুটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল অর্ধপরিবাহী এবং প্রতিরক্ষা উত্‍পাদন। ওয়াশিংটন ডিসিতে বাণিজ্য নীতি ফোরামের ত্রয়োদশ বৈঠকে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাইর সঙ্গে আলোচনার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গোয়েল এ কথা বলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির অভাবের কারণ চিহ্নিত হয়েছে, বিশেষ করে বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের ভারত সফরের ঠিক এক বছর আগে দু'পক্ষের মধ্যে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, তার সম্পূর্ণ বিপরীত বিশেষত চুক্তির প্রত্যাশায়। ফলে আলোচনা ভেস্তে যায় এবং গোয়েল এর জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে দায়ী করেন।

সেই সময় ভারতের তরফে গোয়েল নিজে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং এক পর্যায়ে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে এই চুক্তিটি "এক ফোন কল দূরে" ছিল। জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সস কর্মসূচির আওতায় ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অগ্রাধিকারমূলক জিরো-ডিউটি সুবিধা দিয়েছিল, তা প্রত্যাহারের বিষয়টিও মন্ত্রী খারিজ করে দেন। ২০১৯ সালে এই সুবিধা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন তথ্য বলছে, ওই সময়ে ভারত ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করত। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ছোট ব্যবসার মালিক।

টিপিএফ বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সস প্রোগ্রামের আওতায় সুবিধাভোগীর মর্যাদা পুনরুদ্ধারে ভারত তার আগ্রহের কথা তুলে ধরেছে। বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ভারত আর মিনি ট্রেড চুক্তিতে আগ্রহী ছিল না বা জিএসপি পুনরুদ্ধারে বেশী আগ্রহী ছিল সেই কারণে ভারত অন্যান্য দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, এবং কানাডার সঙ্গে সক্রিয় আলোচনায় রয়েছেন, যারা এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী হবে বলে মন্ত্রী ইঙ্গিত দেন। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে নয়। আর কারণ বাইডেন প্রশাসন তা চায় না।

২০২১ সালে ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২১ সালে এই লক্ষ্য ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন গোয়েল। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক