সুইজারল্যান্ডের মন্ত্রী পারমেলিনের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (ইএফটিএ) নিয়ে আলোচনা করেন পীযূষ গোয়েল।
ভারত এবং ইউরোপের মধ্যকার ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (ইএফটিএ) চুক্তির আওতাভূক্ত ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (টিইপিএ)- এর বিভিন্ন ধাপ ও ধারা এগিয়ে নিতে সুইজারল্যান্ড সফরে গিয়েছেন ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। এসময় সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল মন্ত্রী গাই পারমেলিন এবং দেশটির অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন তিনি।
সোমবার (১৫ জুলাই) সোশ্যাল হ্যান্ডল ‘এক্স’ -এ এই সফর সম্পর্কে মন্ত্রী লিখেছেন, “উভয় পক্ষের মধ্যকার সহযোগিতা বৃদ্ধি, অগ্রাধিকার খাতে সম্পর্ক বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এগিয়ে নিতে সুইস সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি আমরা।”
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ ইউরোপের চারটি দেশের সঙ্গে ভারতের ১০ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। এর অধীনে ভারত আগামী ১৫ বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের বিনিময়ে চারটি ইউরোপীয় দেশ থেকে শিল্প পণ্যের ওপর সবচেয়ে বেশি আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করবে। সেসময় তথ্যটি দিয়েছিলেন দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের বোঝাপড়া ও সমঝোতার পর এই চুক্তি সম্পন্ন হলো। নয়াদিল্লির কাউন্সিল ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও বাণিজ্য বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ ধরের মতে, “এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উন্নত দেশগুলির সঙ্গে ভারতের এটাই প্রথম চুক্তি।”
প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে গত দুই বছরে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি অনুসরণ করেই তৈরি হয়েছে এই চুক্তি। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন যে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি রয়েছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ১ লাখ কোটি ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এ বিষয়ে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, তাঁরা ধারণা করছেন যে—সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড এবং লিচেনস্টাইনের সমন্বয়ে গঠিত ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থা (ইএফটিএ) ভারতের প্রায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে ১৫ বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
সুইস সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, এর বিনিময়ে ভারত সুইজারল্যান্ড থেকে স্বর্ণ বাদে ৯৫.৩ শতাংশ শিল্প আমদানিতে অতি উচ্চ মাত্রার শুল্ক প্রত্যাহার বা আংশিকভাবে অপসারণ করবে। পদক্ষেপটি অবিলম্বে বা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নেবে ভারত সরকার। স্বাক্ষরকারী পাঁচটি দেশকে অবশ্যই চুক্তিটি কার্যকর করার আগে অনুমোদন করতে হবে। সুইজারল্যান্ড ২০২৫ সালের মধ্যে চুক্তিটি অনুমোদনের পরিকল্পনা করছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, বাণিজ্য চুক্তিটিতে বুদ্ধিবৃত্তিক অধিকার এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতের কথাও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এটি পাঁচটি দেশের জন্য ন্যায্য, ন্যায়সংগত এবং আধুনিক একটি বাণিজ্য চুক্তি—যাতে সবাই লাভবান হবে।
গোয়েল আরও বলেন, “এই প্রথম ভারতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করছি আমরা।”
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি উভয় পক্ষের জন্য এক “ভারসাম্যপূর্ণ” চুক্তির পথ প্রশস্ত করেছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত সুইজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেলেনে বাডলিগার আর্তিয়েদা বলেন, “আপনারা যদি বিভিন্ন বাজারের আয়তনের দিকে নজর দেন, তাহলে দেখবেন, ভারত ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বাজার দিচ্ছে। সেই সঙ্গে ভারত বিশ্বায়িত পৃথিবীর একটি দরজা।”
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালকের সাথে সংলাপ
সুইজারল্যান্ড সফরে ব্যবসায়ী নেতাদের পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালার সাথেও দেখা করেছেন ভারতীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। এছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনেও যোগ দিয়েছেন তিনি। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক